ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৩০ কার্তিক ১৪৩১
১০ বছরে হাতির আক্রমণে ১৩৩ জনের মৃত্যু আতঙ্কিত ৭ উপজেলার মানুষ

দক্ষিণ চট্টগ্রামে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে বন্যহাতির বিচরণ

Daily Inqilab এস. কে. এম. নূর হোসেন, পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে

১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

খাদ্যের সন্ধানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার লোকালয়ে এসে পড়ছে হাতি। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বিগত ২৫ বছরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে জীব বৈচিত্র্যের মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে এসে হাতির দল দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী উপজেলায় বিগত ১০ বছরে হাতির আক্রমণে প্রায় ১৩৩ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই হাতির দল আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড এলাকার লোকালয়ে ঘুরছে। এতে এলাকার মানুষসহ ইপিজেডে কর্মরত সবাই হাতি নিয়ে আতংকিত রয়েছে। বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন, বনজসম্পদ ধ্বংস, বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকটের কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছে হাতিসহ বিভিন্ন জীব-বৈচিত্র্য। সেই সাথে আবাসস্থল ধ্বংস, খাবার সঙ্কট, চলাচলের পথ সংকুচিত ও বাধাগ্রস্থ হওয়ার ফলে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী বন্যহাতি আজ লোকালয়ে ছুটে আসছে। এতে বন্যহাতির সাথে মানুষেরও দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি যখন লোকালয়ে ছুটে আসে তখনই দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এ কারণে মানুষ যেমন হাতির হাতে মৃত্যুবরণ করছেন, তেমনি নানাবিধ কারণে হাতিও মারা পড়ছে। চলতি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় দুই মহিলাসহ পাঁচজন বন্যহাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। আমন ধানের মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ধান খাওয়ার জন্য হাতি লোকালয়ে নেমে পড়ে। এসময় হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু ঘটে। মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান, কক্সবাজার ও ভারতের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহ অঞ্চলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে বন্যহাতির আবাসস্থল করিডোর ও বিচরণ ক্ষেত্রগুলো। এসব কারণেই মূলত বন্যহাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব ক্রমেই বেড়ে চলছে। জানা গেছে ২০১৬ থেকে ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫৪টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্যোগে চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় হাতির সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বন্যহাতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে আহ্বায়ক করে কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনিরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, আইইউসিএনের প্রতিনিধি, কোরিয়ান ইপিজেডের দুইজন প্রতিনিধি; বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন অভয়ারণ্যের রুবাইয়া আহমেদ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কমিটির সদস্য সচিব। মানুষ-হাতির দ্বন্ধ নিরসনে করণীয় বিষয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন অভয়ারণ্যের রুবাইয়া আহমেদ জানানÑ বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত বনাঞ্চলগুলোতে ২৬৮টি বন্যহাতি রয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহ এলাকায় ভারতীয় হাতি রয়েছে ১০০টির মতো। তিনি জানান, গত ছয় বছরে চট্টগ্রামের আনোয়ার ও কর্ণফুলী এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী জানান, বিশ্ব জলবায়ুজনিত ঝুঁকি ছাড়াও মানুষের প্রয়োজনে যততত্র অবকাঠামো নির্মাণ, হাতির অভয়ারণ্য বিনষ্ট করা, হাতির করিডোর নষ্ট করা, বনজসম্পদ ধ্বংস করার কারণে এক দিকে যেমন হাতি চলাচলে বাধাগস্ত হচ্ছে, আবাসস্থল ও খাদ্যসংকট দেখা দেয়ায় বন্যহাতির পাল এখন লোকালয়ে ছুটছে।
তিনি জানান, অতিসত্বর হাতির অভয়ারণ্যগুলোকে সচল করা, বনের অভ্যন্তরে হাতির খাবার উপযোগী গাছ রোপণ করা এবং বনের সীমানা এলাকায় বেশি বেশি গাছ রোপণ করা যেগুলো হাতি পছন্দ করে। এসব করা গেলে বন্যহাতি লোকালয়ে আসা বন্ধ হবে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

৬০ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া
ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা
টাঙ্গাইলে নিরাপদ সড়ক দাবি
স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে কমলনগরে গৃহবধূর অনশন
যশোরে ডা. শামা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান

বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান

বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল

বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল

মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ

নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ

সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন

সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন

ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত

ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত

যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা

যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা

চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল

চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা

২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি

২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি

সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম

সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম

কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক

কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক

বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের

যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের

আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল

আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল

ফের কমলো সোনার দাম

ফের কমলো সোনার দাম

সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক

সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক

২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ

২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ